কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একের পর এক উদ্যোগেও কাটছে না ডলারের বাজারে অস্থিরতা। সংকট নিরসনে ডলারের দামের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়ে দাম বাজারভিত্তিক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও ব্যাংকগুলো একে অপরের কাছে বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করছে।
এখনও অনেক ব্যাংকে ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে ১১০ টাকার বেশি।ফলে আমদানিকারকদেরও প্রতি ডলারে বেশি দাম গুনতে হচ্ছে। এতে দাম বাড়ছে আমদানি পণ্যের।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেধে দেয়া দামের সঙ্গে বাজারে বড় ব্যবধান রেখে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়। অন্যদিকে ডলার সংকট কমে আসছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক যৌথ সভায় এবিবি ও বাফেদা ডলারের একক দর নির্ধারণ করে দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়া হয় ১০৮ টাকা। অন্যদিকে রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারে ৯৯ টাকা। এ ছাড়া আমদানিকারকের কাছে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। তবে দাম নির্ধারণ করা হলেও মার্কিন মুদ্রার তেজিভাব কমছে না।
বুধবারও ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ১০৬ টাকা দরে ৪ কোটি ডলার বেচাকেনা করেছে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতোই ৯৬ টাকা দামে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে। এতে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দাম নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এক্সচেঞ্জ রেটের যে ডিসপাবালিটি ফরমাল ও অনফরমাল রেটের মধ্যে এটাকে ঠিক করা দরকার। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি হুকুম দিয়ে সবকিছুর রেট নিয়ন্ত্রণ করতে যায় তাহলে সমস্যা থেকেই যাবে। ’
আরেক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গত দুমাসে বাংলাদেশ ব্যাংককে আড়াই মিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে। ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্টে যদি আমাদের স্বস্তি না থাকে আমাদের কিন্তু বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাবে। রক্তক্ষরণের মতো আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অসাস্থতিশীল থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের সংকট আছে আমি বলবো না। সংকট হলে তো পাওয়ারই কথা না। পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু রেটটা বাড়ছে। এই রেটটা কমিয়ে ফেলা হবে। রিজার্ভ থেকে আগের দামে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজেদের দামে ডলার কেনাবেচা করছে। ’
বাজারে ডলারের সংকট না কাটলেও অর্থমন্ত্রী বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ ডলার আসছে তাতে আগের অবস্থায় যেতে খুব বেশি দিন সময় লাগবে না। ’
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো যেভাবে মুদ্রাবাজার নিয়ে কাজ করে, সেভাবেই চিন্তা করব। তারা যেভাবে ঠিক করে দেয়, সেভাবেই ঠিক করে দেব এবং আমরা ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক লেনদেনে যাবো। ’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, বুধবার ব্যাংকগুলোতে ডলারের গড় ক্রয়মূল্য ছিল ১০২ টাকা ৩৭ পয়সা আর গড় বিক্রয়মূল্য ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা। আর বৃহস্পতিবার খোলবাজারে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে ১১০ টাকার বেশি দরে।